শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : নানাভাবে আলোচিত সমালোচিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন অবশেষে চাকুরি হারালেন। দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে বুধবার এক প্রজ্ঞাপনে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুদকের এই কর্মকর্তা চাকুরিচূত্য হওয়ার খবরে আতংক বিরাজ করছে কক্সবাজারের দুদক দালাল হিসেবে চিহ্নিত শরীফের সহযোগিদের মধ্যে। যারা ইতিমধ্যে দুদক কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সহ পেশাজীবীদের নানাভাবে হয়রানী, জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছিল।
বুধবার দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে প্রচারিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরী বিধিমালা মতে, দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরী থেকে অপসারণ করা হল। তবে তিনি ৯০ দিনের বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ নিদের্শিত প্রজ্ঞাপনটিতে অনুস্বাক্ষর করেছেন দুদক পরিচালক (প্রশাসন ও মানব সম্পদ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। যেটা ১৯ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও অসদাচরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রামে (২) থাকাকালে উপসহকারী পরিচালক শরীফের ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণে ব্যবসায়ীদের অতিষ্ঠ করা হত। এর প্রতিকার চেয়ে তারা দুদক চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করলে তদন্ত করে দুদক। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে শরীফের অপকর্মের তদন্তে দুদক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ- চট্টগ্রামে থাকাকালে তিনি কক্সবাজারের সিআইপি খেতাবপ্রাপ্ত এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে এক ব্যবসায়ীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ ও নোটিশ দিয়ে ডেকে নিয়ে গ্রেফতার করেছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের বাহারছড়া বাজারের পিটিআই রোডের আবদুল হালিমের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায় র্যাবের একটি টিম। এ সময় সেখান থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার সার্ভেয়ার ওয়াসিম খানকে আটক এবং ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করা হয়। জমি অধিগ্রহণ চেকের বিপরীতে ঘুস হিসাবে এ সব টাকা নেন ওয়াসিম। এ ঘটনার তদন্ত করে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। তদন্ত শেষে ওয়াসিমসহ তিন সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেন। ২০২০ সালের ১০ মার্চ করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও হন শরীফ।
অভিযোগ, এ মামলার সূত্র ধরে দুদক কর্মকর্তা শরীফ কক্সবাজারের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে যারা টাকা পেয়েছেন তাদের হয়রানি করেন। জমির মালিক না হয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনেন তিনি। মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে তিনি দালাল বা সোর্সের মাধ্যমে ঘুস দাবি করেন। যারা বেঁকে বসেন মূলত তাদের তিনি হয়রানির পথ বেছে নেন। আর শরীফের কক্সবাজার কেন্দ্রিক এসব অপকর্ম পরিচালনার জন্য চিহ্নিত একটি দালাল সিন্ডিকেটও গঠণ করে ছিল। যারা মুলত কিছু ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধিদের টার্গেট করে চাঁদা দাবী করতো। আর চাঁদা না দিলে শরীফকে ব্যবহার করে করা হতো হয়রানী। একই সঙ্গে এই সিন্ডিকেটটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হয়রানী করার অভিযোগও রয়েছে। এমন কি এই দালাল চিহ্নিতটি দূনীতি প্রতিরোধ কমিটির নানা পদও ভাগিয়ে নিয়েছিল শরীফের ক্ষমতাবলে।
শরীফ চাকুরি হারানোর খবরে এই দালাল সিন্ডিকেটটির মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply